তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন, সেরা পরামর্শ দিয়েছেন এবং বাঙালির সকল সংগ্রাম ও সফলতায় তার অবদান মিশে আছে।’
শনিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতির পিতার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
বক্তব্যের শুরুতেই জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গমাতাকে ও একইসাথে শোকের মাস আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ড. হাছান বলেন, আজ এমন এক মহিয়সী নারীর জন্মদিন, যিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী নন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জননী নন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে নিরবে-নিভৃতে প্রচারবিমুখ হয়ে যিনি অবদান রেখেছেন, জাতিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সন্ধিক্ষণে পৌঁছে স্বাধীনতা অর্জনে তার ভূমিকা কোনোদিন জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি, তারই জন্মদিন আজ।
বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামে, দুর্যোগে অনেক নেতা অনেক সময় ভোল পাল্টেছে, পিছু হটেছে, ক্ষমতাসীনদের সাথে হাত মিলিয়েছে, ঠিক পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আর সেই সময় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সবচেয়ে ভালো পরামর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পাশে হাজির হয়েছেন, বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বাঙালি ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস যেমন একে অপরের কথা ছাড়া লেখা যায় না, তেমনি বাঙালির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা লিখতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কথা অবিচ্ছেদ্যভাবেই এসে যায়, উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
‘বঙ্গমাতার মতো একজন অসমসাহসী, ধৈর্যশীল, সৎ পরামর্শদাতা স্ত্রী পাশে থাকার কারণেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে, বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাতির জন্য লড়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে আমার ধারণা’ বলেন ড. হাছান।
তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য উৎসর্গীকৃত জীবনে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে একনাগাড়ে সংসারধর্ম পালন করা হয়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার সময়গুলোতে বঙ্গমাতাই পরম যত্ন ও বিচক্ষণতায় সংসার ও দল উভয়ই আগলে রেখেছেন।’
জাতির ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে এসময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪ শতাংশ, যা আমরা আবার অর্জন করতে ৪০ বছর লেগেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কৃষিনীতিতে ১৯৭৫ সালে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য অতিরিক্ত ছিলো। অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধুকে তখনই হত্যা করা হয়, যখন তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সফলভাবে পুণর্গঠন করছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে দেশ আজ উন্নয়নে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যেতো।’
বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নপূরণ করে যেতে পারেননি, কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার ধমনী শিরায় শেখ মুজিবের রক্ত প্রবাহিত, যার কন্ঠে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠের প্রতিধ্বনি, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। এবং নানা বিশেষজ্ঞের শংকা-আশংকা ভুল প্রমাণ করে করোনা মোকাবিলায় গত পাঁচ মাসে একজন মানুষও অনাহারে মৃত্যুবরণ করেনি, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহারও বিশ্বে অন্যতম সর্বনিম্ন।
বিএনপি নেতাদের মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে ঘরে বসে টিভি আর অনলাইনে উঁকি দিয়ে সমালোচনা বাদ দিয়ে আর ‘ভুল ধরা পার্টি’র লোকের মতো টক শো’তে টিভির পর্দা ফাটিয়ে ফেলা পরিহার করে সবার সাথে দেশ গড়ায় অংশ নিতে আহবান জানান ড. হাছান মাহমুদ।