লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার কমলনগরের বাসিন্দা ছিলেন দুলাল-সরস্বতী দম্পতি। ৭-৮ বছর আগে নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছেন তারা। এরপর থেকে যাযাবর জীবনযাপন করছেন।
দুলাল-সরস্বতী দম্পতি জানান, নদীভাঙনের কারণে বারবার ঠিকানা বদল হয়েছে তাদের। অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। জমির মালিক বললে আবার সরে যেতে হচ্ছে। কারও জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেলে দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলের বারান্দায় অথবা কোনো বাজারের ছাউনির নিচে রাত কাটাতে হয়।
জানা যায়, বর্তমানে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামে অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন দুলাল-সরস্বতী দম্পতি। সম্প্রতি নোয়াখালীতে বন্যায় তাদের বাড়িঘর ডুবে যায়। এতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিন শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন দুলাল-সরস্বতী দম্পতি। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে ভুগছেন খাদ্য সংকটে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে হাজীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন দুলাল-সরস্বতী। তাদের দুই ছেলে সুজন ও অয়ন মজুমদার। ঘরে একটি মাত্র চৌকি। চার জন এই চৌকিতেই থাকেন। ঘরের মেঝে স্যাঁতসেঁতে। বাড়ির চারপাশে কাঁদা।
সরস্বতী মজুমদার বলেন, আমরা পরদেশী। আমাদের জীবন যাযাবরের মতো। ভিটামাটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানে এসেছি। এই জায়গায় আছি প্রায় পাঁচ বছর। তার আগে ছিলাম আরেক জায়গায়। সেই জমির মালিক ছেড়ে দিতে বলায়, এখানে এসেছি। এ জমির মালিকের বাড়ি সন্দ্বীপে। তিনি দয়া করে পাঁচ বছর থাকতে দিয়েছেন। এখন ছেড়ে দিতে বলায় অন্য কোথাও যাব। যতদিন জায়গা না পাবো, ততদিন খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটাতে হবে।
দুলাল মজুমদার বলেন, আমি অসুস্থ। ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। আগে দিনমজুরের কাজ করতাম। বন্যার পর থেকে কাজ বন্ধ। তাই আয়ও নেই। না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা। বন্যার মধ্যে কেউ খবর নেয়নি। কোনো সাহায্য পাইনি। পাশের বাড়ি থেকে থেকে সামান্য পরিমাণে মুড়ি-চিড়া দিয়েছিল। তা খেয়ে কয়েক বেলা কেটেছে। এখন দুশ্চিন্তায় আছি। জামির মালিক জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছেন। এখন কোথায় যাব জানি না।
এ বিষয়ে জানতে চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনে ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-আমিন সরকার বলেন, সরকারিভাবে যেই অনুদান এসেছে আমরা তা দিয়ে দিয়েছি। এছাড়া বেসরকারিভাবে অনেক সহায়তা করা হয়েছে। দুলাল মজুমদারের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।