ঢাকা সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রচ্ছদ অর্থনীতি তালিকাতেই সীমাবদ্ধ কৃষকের প্রণোদনা 

তালিকাতেই সীমাবদ্ধ কৃষকের প্রণোদনা 

বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সরকারি সহায়তা বা প্রণোদনা পাননি ফেনী জেলার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৯০ হাজার কৃষক। সহায়তায় সরকারি প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে তালিকা প্রণয়ন হলেও এখনও মেলেনি কোন প্রণোদনা। তবে সরকারি সহায়তার আশায় বসে না থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন উদ্যোমে চাষাবাদ শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮৭ হাজার কৃষককে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তিন ধাপে সরকারি প্রণোদনা সহায়তা করা হবে। ইতোমধ্যে করা হয়েছে তালিকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে ২৩ হাজার কৃষককে শীতকালীন সবজির বীজ ও নগদ অর্থ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এছাড়া আরো দুই ধাপে শীতকালীন সবজি চাষে ৪৩ হাজার কৃষককে বীজ, সার ও নগদ অর্থ এবং তৈল ও ডাল জাতীয় ফসল চাষে ১২ হাজার কৃষককে বীজ ও সার প্রদান দেওয়া করা হবে।

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কৃষক মির্জা আমিন বাদশা। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দফা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তার তিন একর জমিতে আবাদ করা আমন ধান। অর্থ ও নতুন করে বীজ না পাওয়ায় এখন খালি পড়ে রয়েছে সেই আবাদি জমিগুলো।

 তিনি বলেন, বন্যার পর ধান আবাদ করেছিলাম, কিন্তু পরবর্তীতে তা আবারও পানিতে ডুবে গেছে। মুছাপুর ক্লোজার না থাকায় পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশে ও তেমুহনী এলাকায় জমিতে এখনো পানি জমে আছে। এখন বীজ ও অর্থের অভাবে নতুন করে কিছু করতে পারছি না।

সোনাগাজীর চরচান্দিয়া এলাকার কৃষক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বন্যায় সাত একর জমির আউশ ধান ও দশ একর জমিতে লাগানো আমান ধান নষ্ট হয়েছে। পরবর্তী বিভিন্ন সময় নাম নিলেও এখনো কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। তবে ঘুরে দাঁড়াতে নিজ উদ্যোগে দশ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদের চেষ্টা করছি।

শুধু বাদশা ও ফরিদই নন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার হাজারো কৃষক বীজ-সার ও অর্থসংকটে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। বন্যায় কৃষিখাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হলেও তালিকা তৈরিতেই এখনো সীমাবদ্ধ রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রণোদনা কার্যক্রম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বন্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কৃষক পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের প্রণোদনার জন্য তালিকা তৈরির কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে সরকারি সহায়তার জন্য আশায় বসে না থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। অন্যদিকে মুছাপুর রেগুলেটর বিলীনের প্রভাবে দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে জমিতে পানি জমে থাকায় আগাম চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষি কর্মকর্তা।

তবে সরকারি সহায়তার আশায় বসে না থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন উদ্যোমে চাষাবাদ শুরু করেছেন ফেনীর কৃষি উদ্যোক্তরা। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ১৭ একর জমিতে প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে আউশ আবাদ নষ্ট হয়ে যায় সোনাগাজীর কৃষক রাশেদের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হাল ছাড়েননি এ কৃষি উদ্যোক্তা।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা না পেলেও আবার নতুন করে জমিতে আবাদ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে জমিতে লাগানোর জন্য টমেটো, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ক্যাপসিকামের চারা তৈরি করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে সবজির চারা রোপণ করতে পারব। সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় জোয়ার-ভাটার প্রভাবে কিছু জমিতে এখনো পানি জমে আছে। এতে আগাম চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে।

লেমুয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শিপন চৌধুরী বলেন, লেমুয়ার কৃষকরা ট্রাক ভাড়া করে কিশোরগঞ্জ, রংপুর, জয়পুরহাট, নেত্রকোনা ও গাইবান্ধা থেকে বিভিন্ন জাতের ধানের চারা কিনে ৩৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছেন। এছাড়া এই ব্লকের পাঁচ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। কিছু কৃষক ইতোমধ্যে লাউ, টমেটো, মুলা ও লালশাক আবাদ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যে সেসব খাওয়ার উপযোগী হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একরাম উদ্দিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের প্রণোদনার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কবে নাগাদ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। তবে দ্রুত এ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে।

জেলা পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বসতবাড়িতে শাকসবজি চাষের জন্য ৮ ধরনের শীতকালীন সবজির বীজ এবং উৎপাদন ও রোপণের জন্য কৃষক প্রতি এক হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

0 FacebookTwitterPinterestEmail

অনুসন্ধান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ফেসবুকে আমরা

সম্পাদক ও প্রকাশক

মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া (তুহিন)

নির্বাহী সম্পাদক

সোনিয়া রহমান

অফিসঃ

৪৯ মতিঝিল (৮ম তলা), শাপলা ভবন, শাপলা চত্বর, ঢাকা - ১০০০

ই-মেইলঃ

rightwayciezs@gmail.com

টেলিফোনঃ

+৮৮ ০১৭১২-৭৭৭ ৩৬৩

মার্কেটিংঃ

+৮৮ ০১৯৪৮- ৯০০ ৯১১

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব rightwaynews24.com কর্তৃক সংরক্ষিত