‘দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মারামারির মতো অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায়’ গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি, জরুণ, জিরানি ও কাশিমপুর এলাকায় গার্মেন্টসহ ২৫টি কারখানায় কর্মীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
এসব কারখানার মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছয়টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলোতে এক দিনের ছুটি দিয়েছেন কারাখানার মালিকারা।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকছে তুকুকা গ্রুপের তুসুকা জিন্স লিমিটেড, তুসুকা ট্রাউজার্স লিমিটেড, তুসুকা প্রসেসিং লিমিটেড, তুসুকা প্যাকেজিং লিমিটেড, তুসুকা ডেনিম লিমিটেড এবং তুসুকা ওয়াশিং লিমিটেড- এই ছয়টি কারাখানা।
তুসুকা কর্তৃপক্ষের দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, গত শনিবার থেকে শ্রমিকদের একটি দল কিছু অজ্ঞাতনামা বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনি ধর্মঘট শুরু করে।
নোটিশের বর্ণনা অনুযায়ী, শ্রমিকরা সকাল বেলা হাজিরা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে কারখানার প্রধান গেটে এসে জড়ো হয় এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান করলেও শ্রমিকরা তা অমান্য করে।
‘শ্রমিকদের একটি অংশ অস্থিতিশীল আচরণ প্রদর্শন করে, যা দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং মারামারির মতো অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে,’ বলা হয়েছে তুসুকার নোটিশে।
কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, শ্রমিকদের এমন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর আওতায় অবৈধ ধর্মঘট হিসাবে গণ্য হয়। শ্রমিকদের এহেন কর্মকাণ্ডে কারখানার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সম্পত্তির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ায় তুসুকা গ্রুপ বাধ্য হয়ে ৩ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে কারখানাগুলোর কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
তুসুকা কারখানার মহাব্যবস্থাপক মাসুম হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল আজ কিছু কারখানায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। যার কারণে কারখানা শ্রম আইন অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এছাড়াও কোনাবাড়ি বিসিক ও জরুণ এলাকায় বিভিন্ন দাবি ও নিরাপত্তার অভাবে ফ্যাশন সামিথ, ফ্যাশন পয়েন্ট, রেজাউল এ্যাপারেলস ,রিপন নীটওয়্যার, এম এম নীটওয়্যার, এসট্রো নীটওয়্যারসহ ৯টি করাখানা এক দিনের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে।
কোনাবাড়ি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘জরুণ এলাকার দুটি ও কোনাবাড়িতে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তুসুকা গ্রুপের কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।’
এদিকে গাজীপুরের কাশিমপুরে প্রোডাকশন জিএম, প্রোডাকশন ম্যানেজার ও এডমিন ম্যানেজারকে অপসারণের দাবিতে রোববারও কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন ডরিন গ্রুপের শ্রমিকরা।
অবশ্য ডরিনের কৃর্তপক্ষের বক্তব্য- শনিবার দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এরপর শ্রমিকরা ফ্যাক্টরির নতুন প্রোডাকশন জিএম শামীম হোসাইনকে অপসারণের দাবি তোলেন। এ বিষয়ে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় তারা আবার বিক্ষোভ দেখান। এক পর্যায়ে তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত জিরানি-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
তবে বিকেলে ওই আন্দোলন দেখে ভাঙচুরের আশঙ্কায় ডরিন, ডরিন এপারেল্স, নবী টেক্সটাইলসহ আশপাশের অন্তত ১২-১৩টি কারখানা রোববারের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কাশিমপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ডরিন, ডরিন এপারেল্স কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। পরে তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখলে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়।’
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ কোনাবাড়ী-কাশিমপুর জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু তালেব বলেন, তুসুকা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। কাশিমপুর জোনে ১০টির বেশি কারখানা এক দিন পর ছুটি ঘোষণা করে।’
গত ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে গাজীপুরে আটটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল ৩০টি পোশাক কারখানায়।
শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩ (১) ধারাতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন; এমন বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকেরা কোনো মজুরি পাবেন না।
সেপ্টেম্বর মাসে গাজীপুর এবং ঢাকার আশুলিয়া ও সভার মিলে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে বেশ অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়। বেতন বৈষম্য দূর করা, বকেয়া বেতন বুঝে পাওয়া ও নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু করণে এই অস্থিরতা ও বিক্ষোভের খবর দেয় সংবাদমাধ্যম।
৫ আগস্টের পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গার্মেন্ট খাতে বিভিন্ন দাবিতে যে বিক্ষোভের ধারা শুরু হয়, তা এখনও চলছে।