বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, “সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ বর্তমানে তুলনামূলক অনেক বেশি। দুই দেশের আর্থিক খাত যদি যৌথভাবে কাজ করে, তবে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর এই খরচ কমানো সম্ভব হবে।”
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনের বলরুমে সৌদি আরব-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই) এই সামিট আয়োজন করে। সামিটে দুই দেশের ব্যবসায়ী, নীতি-নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহন করেন।
বিজনেস সামিটে অংশ নেন স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, শিক্ষা, আরএমজিসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অংশ নেয় সরকারি কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরাও। সামিটের পণ্য প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃদেশীয় বিনিয়োগ ও অর্থ লেনদেন এখন একটি বড় আলোচ্য বিষয়। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস সৌদি আরব। বর্তমানে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ দেন, যা তাদের জন্য বড় চাপ। দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একত্রে কাজ করলে এই ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।”
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “আমরা এখন ট্রিলিয়ন ডলারের পথে অগ্রসর হচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সহনশীল, বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক সংকট সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি কখনোই নেতিবাচক হয়নি। আমি সৌদি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই—তারা যেন বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন।”
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। প্রবাসী শ্রমবাজারে তার উদ্যোগেই আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। আজকের রেমিট্যান্স সাফল্যের মূলেও সেই ঐতিহাসিক উদ্যোগ রয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিলে রেমিট্যান্স আয় বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বড় তহবিল প্রয়োজন। সৌদি আরবের বিনিয়োগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে ফ্রন্টিয়ার থেকে ইমার্জিং মার্কেটে উন্নীত করা সম্ভব।”
স্বাগত বক্তব্যে এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, “সৌদি আরব আমাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু, কিন্তু ৫৩ বছরে কোনো যৌথ ব্যবসায়ী চেম্বার ছিল না। অবশেষে আমরা সেটি গঠন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষি, আইটি ও দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা সৌদি বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করব।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। একটি প্রবন্ধে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশ ও সৌদি আরব এখনো একে অপরের শীর্ষ পাঁচ বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে নেই, অথচ সম্ভাবনা বিশাল। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উভয় দেশ পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে।”
সামিটে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন ২০ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে দিচ্ছেন শেখ ওমর আব্দুলহাফিজ আমিরবকশ। যিনি মাজদ আল উমরান গ্রুপের কর্ণধার। হসপিটালিটি, আবাসনসহ বেশ কিছু খাতে ব্যবসা আছে এ গ্রুপের। প্রতিনিধি দলে আছেন আল ইসায়ি গ্রুপের পরিচালক নাজি আব্দুল্লাহ। সেবা, উৎপাদনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ আছে এ কোম্পানির। এছাড়া প্রতিনিধি দলে আছেন বাদশাহ আব্দুল আজীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং একটি আইটি কোম্পানির কর্ণধার মোহাম্মদ আসিফ সালাম, সৌদি আরবের আল তৈয়বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য খাত বিশেষজ্ঞ ডক্টর খালিদ আল হারবি।