ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বন্ধ থাকা ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেডের কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী দু’টি কারখানায় হামলা চালায়। তাদের ছোঁড়া ইটপাটকেলের আঘাতে মোছা. রোকেয়া বেগম নামে এক নারী শ্রমিক নিহত হন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার জিরাবো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোছা. রোকেয়া বেগম ম্যাসকট গার্মেন্টসের সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর ছিলেন। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর কারখানায় যোগ দেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেডের কারখানাটি বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে সেটি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তারা পাশের রেডিয়েন্স নীট ওয়্যার লিমিটেড কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে তাদের সঙ্গে ওই কারখানার শ্রমিকদের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে তারা বের না হওয়ায় রেডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় রেডিয়েন্সের শ্রমিকেরাও তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে ইট পাটকেলের আঘাতে ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেডের মোছা. রোকেয়া বেগমসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
ওই ঘটনায় আহতদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রোকেয়া বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। সঙ্কট সমাধানে বিজিএমইএ, সেনাবাহিনীর সদস্য, শ্রমিকসহ কারখানা সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করেন।
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে আসেন। ওই সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউ কারখানায় ছিলেন না। শ্রমিকেরা জড়ো হলে আশপাশের কারখানা থেকে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে একজন শ্রমিক মারা যান এবং দুইজন আহত হন।’
অন্যদিকে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লি. কর্তৃপক্ষ কারখানায় দাঙ্গা হাঙ্গামার অভিযোগ এনে ৭৫ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। শ্রম আইনের ২৩/৪ ধারা অনুযায়ী তাদের বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কারখানা সংলগ্ন নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে জড়ো হন ওই কারখানার শ্রমিকরা। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেন।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেওয়া ওই নোটিসে বলা হয়, নিম্নলিখিত শ্রমিকদের অসদাচারণের দায়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৩ (৪) ধারা মোতাবেক সাময়িক বরখাস্তসহ কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে কারখানা রক্ষিত ঠিকানা মোতাবেক রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় প্রেরণ করা হয়েছে। প্রত্যেককে ৮ কর্মদিবসের মধ্যে কারখানার ঠিকানায় কারণ দর্শানোর নোটিসের ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্ট এন্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনায় শ্রম আইনের ২৩/৪ ধারায় মালিকপক্ষ পদক্ষেপ নিতে পারেন। কিন্তু আগের এমন পদক্ষেপে দেখা গেছে মালিকপক্ষের লোকজন দিয়ে তদন্ত কমিটি করায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।’