ঘূর্ণিঝড় রেমালে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান।
সোমবার (২৭ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ছয় কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি জেলায় জি আর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ ও গোখাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলা একটি সমন্বিত কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিপিপিসহ অন্যান্য সেচ্ছাসেবী সংগঠন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় আমরা এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে। যার প্রভাব দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় আজও অব্যাহত রয়েছে। রেমালের কারণে উপকূলীয় এলাকায় পানি ঢুকে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবনকে ব্যাহত করেছে। বেশ কিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সরকারের সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগপূর্ব কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।
মহিবুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিয়েছে এবং আগাম কার্যাবলী (এন্টিসিপেটরি অ্যাকশন) ও সাড়া প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমরা আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া কেন্দ্রের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। আজ সকাল থেকেই আমরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে উপকূলীয় জেলাসমূহের সংসদ সদস্যদের সাথে ফোনে কথা বলে স্থানীয় মানুষের খোঁজ-খবর নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্রগ্রামে মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হলো, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়নের ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাসমূহে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আট লাখেরও বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি।
তিনি আরও বলেন, দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসাসেবা দিতে মোট এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে চালু আছে এক হাজার ৪০০টি টিম।