পার্বত্য জেলা বান্দরবান। ভ্রমণপিপাসুদের মনের সব খোরাক যেন এই জেলাতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে এখানে পর্যটকের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্যহারে। ফলে ভালো নেই বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, বান্দরবানে এক সময় পর্যটকের ভিড়ে হোটেল-মোটেলে রুম পাওয়া ছিল কষ্টকর। এখন সেখানে পর্যটক খরায় দিনের পর দিন রুম খালি পড়ে থাকে। শুধু হোটেল-মোটেল নয় এর প্রভাব পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়।
তারা জানান, ২০২০ সালে মহামারি করোনার সময় তাদের ব্যবসায় ধস নামে। সে সময় বন্ধ হয়ে যায় সব পর্যটন স্পট। তবে ২০২২ সালে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তারা। তবে গত বছরের বন্যায় আবার পর্যটন ব্যবসায় ধস নামে। আর চলতি বছরের এপ্রিলে কেএনএফ সদস্যদের থানচি ও রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা এবং এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরুর পর পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসা।
বিশ্ব পর্যটন দিবসের দিন শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নীলাচল ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে অল্প সংখ্যক পর্যটকের দেখা গেছে। নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সুমি ত্রিপুরা বলেন, সারাদিনে মাত্র দুইশর মতো টিকিট বিক্রি করেছি। অন্যান্য সময় সাপ্তাহিক ছুটির দিন দুই হাজারের অধিক টিকিট বিক্রি হতো। যারা ঘুরতে আসছেন তারা বেশিরভাগই আশপাশের জেলার।
চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে বেড়াতে আসা মোহাম্মদ হোসেন ও পারভিন আক্তার দম্পতি বলেন, পাহাড়ের চূড়ায় বসে সূর্যাস্ত যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই সুন্দর।
বান্দরবান হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা ও বন্যার পর কেএনএফ সদস্যদের ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা এবং তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরুর পর বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেলে ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার পরেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই জেলায় আবারও পর্যটকদের আগমন ঘটবে।’
বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সবসময় সজাগ রয়েছে।’
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘পার্বত্য জেলা বান্দরবান পর্যটকদের পদচারণয় মুখরিত থাকুক। আমাদেরও এটাই প্রত্যাশা। জেলায় ৭৪টি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে দু-চারটি কেন্দ্র ব্যতীত বাকি সব পর্যটনকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার জন্য উপযোগী। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও যথেষ্ট ভালো আছে।’