ভ্রমণ ভিসায় ভারতে গিয়ে করোনাকালে জেলে বন্দি হওয়া ২৫ বাংলাদেশি মুক্তি পেয়েছেন। শনিবার (২৯ আগস্ট) ভারতের ধুবড়ি আদালতের দেওয়া আদেশের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে তারা কারামুক্ত হয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
ভারতের কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তিতে সহায়তাকারী, ধুবড়ির সাবেক বাম নেতা উজ্জ্বল ভৌমিকের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন রেল-নৌ,যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি ও সংগঠক নাহিদ হাসান নলেজ।
এর আগে গত ৩ মে দেশে ফেরার সময় ভ্রমণ ভিসা নিয়ে ভারতে যাওয়া ২৬ বাংলাদেশিকে আটক করে ভারতের ধুবড়ি পুলিশ। এদের একজন ভারতে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাদের সকলের বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায়।
নাহিদ হাসান নলেজ জানান, বৈধ ভিসায় ভারতে গিয়ে করোনাকালে আইনের বেড়াজালে আটক ২৫ বাংলাদেশি প্রায় চার মাস ভারতের কারাগারে আটক থাকার পর আদালতের আদেশে আজ ভারতের ধুবড়ি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ভারতের হাইকোর্টের আইনজীবী অসীম দাস গুপ্ত এবং ধুবড়ি আদালতের আইনজীবী রাজস্বী দাস গুপ্ত আটক বাংলাদেশিদের পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন।
মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশিদের স্বজনদের মধ্যে আটক হানিফ মিয়া ও মানিক মিয়ার বাবা লাল মিয়া, আমিনুল ইসলামের ছোট ভাই মমিনুলসহ রেল-নৌ,যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সদস্যরা বুড়িমারি চেকপোস্টে কারামুক্ত বাংলাদেশিদের গ্রহণ করার জন্য রওয়ানা হয়েছেন।
নাহিদ হাসান নলেজ বলেন, ‘ভারতের কারাগার থেকে মুক্ত বাংলাদেশিরা ইতোমধ্যে দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। তারা সোমবার বিকালে বুড়িমারি-চেংড়াবন্ধা চেকপোস্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন। আটকদের স্বজনরা তাদের মুক্তির খবর পেয়েছে এবং তাদেরকে বরণ করতে বুড়িমারি চেকপোস্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ২৬ বাংলাদেশি ভারতে যান। বৈধ পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ভিসা থাকলেও ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন চলার মধ্যে গত ২ মে ওই ২৬ জন বাংলাদেশি দুইটি মিনিবাসে আসামের জোরহাট জেলা থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন। পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা ছিল তাদের। ভারতে জেলে ও খামারকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব বাংলাদেশিকে পরদিন (৩ মে) সকালে বাহালপুর এলাকা থেকে আটক করে আসামের ধুবড়ি জেলা পুলিশ।
করোনা পরীক্ষার পর তাদের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। গত ৫ মে ওই ২৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং ফরেনার্স (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০৪ এবং পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৬৭’র ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দেশটির পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাসপোর্টধারী এসব বাংলাদেশি টি-ওয়ান ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।
এই ভিসাধারীদের কাজের অনুমতি না থাকলেও আসাম পুলিশের অভিযোগ, এই বাংলাদেশিরা রাজ্যের জোরহাট, গোলাঘাট ও শিবসাগর এলাকায় কর্মসংস্থান কার্যক্রমে যুক্ত থেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তাদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে একাধিকবার মানববন্ধন করেন আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা।
এরমধ্যে গত ১ জুলাই কারা হেফাজতে বকুল মিয়া নামে এক বাংলাদেশি মারা গেলে চারদিন পর তার মরদেহ দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। অপর ২৫ বাংলাদেশি প্রায় চার মাস পর আজ কারামুক্ত হয়ে দেশে ফিরছেন।