ত্রিপুরায় ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে দিয়েছে ভারত। একইসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর দাবি করেছে, রাজ্য সরকার নয়, বরং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাঁধের স্লুইস গেট খুলে কিছু পানি প্রবাহিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের দিকে।
ত্রিপুরার সংবাদমাধ্যমগুলো কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা। রাজ্যের বেশ কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, খোদ ত্রিপুরা সরকারই বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে। এমনকি বাঁধ খুলে দেওয়ার বিষয়টি তদারক করেছেন রাজ্যের সোনামুড়া মহকুমার প্রশাসক।
ত্রিপুরার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদ তাদের ২১ আগস্ট সংখ্যায় ‘রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় মৃত ৭, নিখোঁজ ২’ শিরোনামের প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘টানা বৃষ্টিতে ডম্বুরের জল বিপদসীমার উপরে উঠে যাওয়ায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টায় ডম্বুরের গেট খুলে দেওয়া হয়। এতে গোমতীর জল আরও বেড়ে গিয়ে অমরপুর,উদয়পুর,সোনামুড়ার নদীর দুপাশের প্লাবিত এলাকার জল আরও বেড়ে যায়।’
ত্রিপুরার প্রথম দৈনিক জাগরণ ত্রিপুরা ২১আগস্ট ‘গোমতী নদীর জলস্তর বৃদ্ধি, বিপদজনক’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জানায়, ‘আজ সকাল ৮:৩৫ মিনিটে ডুম্বুরের তিনটি গেইটের মধ্যে একটি গেইট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জেলা শাসকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও এলাকার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে গভীর রাত পর্যন্ত নিজেদের সবজি ক্ষেতগুলি রক্ষা করার চেষ্টা জারি রেখেছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাছাড়া, ডুম্বুরের বাঁধ ছাড়ার পরেই গোমতী নদীর জলের স্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকে। সকালে তা অনেকটাই আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। সম্পূর্ণ বিষয়টি নিজে উপস্থিত থেকে তদারকি করছেন সোনামুড়া মহকুমা শাসক অরূপ দেব। জেলা শাসকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ডুম্বুর এর একটি গেইট সকাল ৮:৩৫ মিনিটে ছাড়ার পর থেকে রাজারবাগের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলে তলিয়ে যায়। এখানকার জনগণকে উদ্ধার করার স্থানীয় জনগণের সাথে হাত লাগিয়েছেন।’
দ্যা ফ্যাক্ট অব ত্রিপুরা ২০ আগস্ট ‘বাঁধ খুলে দেওয়া হবে ডুম্বুর জলাশয়ের, সতর্কতা জারি প্রশাসনের’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ডুম্বুর জলাশয়ে জলের চাপ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশেষে ডুম্বুর জলাশয় থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে গোমতী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিল প্রশাসন। বিগত কয়দিন যাবত রাজ্যে একনাগারে বৃষ্টিপাতকে কেন্দ্র করে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ঘন্ডাছড়ায় ডুম্বুর জলাশয়ে জলের চাপ স্বাভাবিকের চাইতে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থাতে জল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিন্তু জল ছাড়ার পর গোমতী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষদের ক্ষয়ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কোন মানুষের যাতে ক্ষয়ক্ষতি না হয় এই বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে প্রশাসনের তরফে এলাকাতে মাইক দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।’