ঢাকা মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রচ্ছদ রাজনীতি ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই’

‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই’

জনসভায় বক্তব্য রাখছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই, যে বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমরা চাই না কেউ আর এই জাতিকে বিভক্ত করুক। আমরা মেজরিটি, মাইনরিটি শব্দ শুনতেই চাই না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছেন তারা সকলেই গর্বিত মর্যাদাবান নাগরিক।’

শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর ও জেলা শাখা আয়োজিত সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশে প্রতিটি শিশু জন্ম নেওয়ার পর থেকে ‍মৃত্যু পর্যন্ত সে একজন নাগরিকের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে। সে ধনীর ঘরে জন্ম নিয়েছে না গরিবের ঘরে জন্ম নিয়েছে এটি প্রশ্ন নয়, সে জন্ম নেওয়ার পর তার চারটি অধিকার রাষ্ট্রকে দিতেই হবে। এক, তার খাওয়া-বাঁচার অধিকার; দুই, তার চিকিৎসার অধিকার; তিন তার শিক্ষার অধিকার এবং চার নম্বর হলো তার কাজ পাওয়ার অধিকার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না কেউ আর এই জাতিকে বিভক্ত করুক। আমরা মেজরিটি, মাইনরিটি শব্দ শুনতেই চাই না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছেন, তারা সকলেই গর্বিত মর্যাদাবান নাগরিক। ধর্ম যার যার, দল যার যার, প্রিয় দেশটি আমাদের সবার। সুতরাং সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে তাদের ধর্মীয় উপাসনা তারা করবে। এখানে অন্যের ধর্মের কেউ তাদের দিকে চোখ রাঙাবার সাহস করবে না। যদি মুসলমানদের মসজিদে পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন না হয় তাহলে হিন্দুদের মন্দিরেও প্রশ্ন উঠবে না। তারা শান্তিতে সেখানে তাদের উপাসনা করবে।’

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে বিডিআরের হেডকোয়ার্টার পিলখানায় যে ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই দেশে জুলুমের রাজত্ব শুরু হয়েছিল। যার সমাপ্তি হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট; যেটাকে আমরা জুলাই এবং আগস্ট বিপ্লব বলছি। সেখানে শত শত যুবককে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মেরুদণ্ডে গুলি করে অবশ করে দেওয়া হয়েছে। যারা আর কোনদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বেশি বেশি করে বলতেন আর ফেরি করতেন, তারাই এদেশের যুবকদের জীবন্ত শহীদে পরিণত করেছেন।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘যে দল ১৮ কোটি জনগণের দিকে গুলি ছুড়েছিল, সেই জনগণের কাছে তাদের আর ভোট চাওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নাই। তাদের নাম আর বাংলাদেশের জনগণ শুনতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ যাদের গুলির পরোয়া করেনি, সেই খুনিদের এদেশের মাটিতে মানুষ আর প্রকাশ্যে হাটঁতে দিবে না।’

জামায়াতে ইসলামীর এই প্রধান নেতা আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সেই দল যে দলের বিরুদ্ধে অন্য কোনো ধর্মের মানুষের এক ইঞ্চি জমি অবৈধভাবে দখলের কোনো অভিযোগ নেই। এই দলের বিরুদ্ধে যেকোন মানুষের মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করার অভিযোগ নেই। ‍এই দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। এই দলের বিরুদ্ধে অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে গিয়ে ভাঙচুর করার, মারামারি করার কোনো অভিযোগ নেই। যদি কেউ বিশ্বাসযোগ্য কোনো অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে পারে, আমি নিঃসন্দেহে তাদের কাছে ক্ষমা চাইব।’

তিনি বলেন, ‘আমি দাবি করছি না, আমরা সকল ভুলের ঊর্ধ্বে। ভুল আমাদের হতেই পারে। ভুল এবং অপরাধ দুটো এক জিনিস নয়। ভুল হচ্ছে মানুষ না বুঝে যেটা করে আর অপরাধ হচ্ছে যেটা বুঝে করা হয়। ভুল হলে আমাদের ধরিয়ে দেবেন।’

‘তবে আমরাই এটা বিশ্বাস করি আমরাই একমাত্র মজলুম নই, সারা জনগণ মজলুম, সমস্ত দল মজলুম শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট দল এবং তাদের দোসররা ছাড়া। এজন্য সকল মজলুমের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা এবং সহানুভূতি আছে।”

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই, যে বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। কেউ থাকবে ১৫ তলায় আর কেউ থাকবে গাছ তলায়– এটা আমরা মানব না। কেউ খাবে কেউ খাবে না এটা আমরা মানব না। কারো সন্তান বিদেশে বিলাসবহুল গাড়ি চালিয়ে লেখাপড়া করবে, আর গরিবের সন্তান বাংলাদেশে তার ন্যায্য শিক্ষার অধিকার পাবে না- এটা আমরা মানব না। অবশ্যই তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই। যে বাংলাদেশে হিংসা, হানাহানি, প্রতিশোধের রাজনীতির কবর রচিত করতে চাই। শুধু প্রতিশোধের পর প্রতিশোধ তাহলে এই জাতি বাঁচবে কীভাবে? এর পরিসমাপ্তি হওয়া উচিত। এই জন্য আমরা বলেছিলাম আমাদের উপর যে বড় বড় অপরাধ করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার, আমাদের নেতৃবৃন্দকে খুন করেছে, কার্যালয়ে তালা দিয়েছে, ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে, প্রতীক কেড়ে নিয়েছে, নিষিদ্ধ করেছে, মোটা দাগে যে অপরাধ করেছে তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিশোধ নেব না।

‘তারা যাদেরকে খুন করেছে, গুম করেছে, পঙ্গু করেছে, মানুষের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে তার প্রত্যেকটার বিচার হতে হবে। আমরা প্রতিশোধ নেবো কিন্তু তাদের বিচার চাই এই দুটোকে মিলাব কীভাবে? প্রতিশোধের রাজনীতি মানে আইন হাতে তুলে নেওয়া।”

জামায়াতে ইসলামীর এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা ওই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেই বাংলাদেশে কোনো বিচারকের চেয়ারে কোনো দুর্বৃত্ত ঘুষ খাওয়ার চিন্তা করতে পারবে না। শ্রমিকদের তার ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পর, বেতনের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে না। সেখানে শ্রমিকের সঙ্গে মালিকের বন্ধুর মতো সম্পর্ক হবে। আমরা এই বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, তারুণ্যনির্ভর ও মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা পাশে থাকবেন।’

জামায়াতে ইসলামীর বগুড়া শহর শাখার আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রিয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী।
আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলা শাখার আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, সিরাজগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা শাহীনুর আলম প্রমুখ।

এর আগে সকালে একই স্থানে শহর জামায়াতের নবনির্বাচিত আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে  রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ৪ হাজার ৪৭ জন রুকনের গোপন ব্যালটের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত বগুড়া শহর জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল এবং বগুড়া জেলা জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকার। তাদেরকে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সংগঠনের সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী শপথ প্রদান করেন।

0 FacebookTwitterPinterestEmail

অনুসন্ধান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ফেসবুকে আমরা

সম্পাদক ও প্রকাশক

মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া (তুহিন)

নির্বাহী সম্পাদক

সোনিয়া রহমান

অফিসঃ

৪৯ মতিঝিল (৮ম তলা), শাপলা ভবন, শাপলা চত্বর, ঢাকা - ১০০০

ই-মেইলঃ

rightwayciezs@gmail.com

টেলিফোনঃ

+৮৮ ০১৭১২-৭৭৭ ৩৬৩

মার্কেটিংঃ

+৮৮ ০১৯৪৮- ৯০০ ৯১১

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব rightwaynews24.com কর্তৃক সংরক্ষিত