ঢাকার কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে তা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার দাবি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন শিক্ষাক্ষার্থীরা।
এই দাবিসহ আরও দুটি ইস্যু নিয়ে সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকে আন্দোলনে নামার কথা বলেছেন তারা।
রোববার (৩ নভেম্বর) জবি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের সঙ্গে আন্দেলনে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে শিক্ষার্থীদের, যার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।
যে তিন দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা নামছেন, তার মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনা এবং সাত দিনের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসার নিয়োগ করা।
দ্বিতীয় দাবিটি হলো যত দ্রুত সম্ভব সেনাবাহিনীর হাতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের ঘোষণা দিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা দিতে হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলের কাজ শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে অবিলম্বে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিন নম্বর দাবিটি হলো পুরোনো ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার আমলে করা সব অনৈতিক চুক্তি বাতিল করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ভূমি অধিগ্রহণ ছয় বছরেও আমরা সম্পন্ন করতে পারিনি। অথচ এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করেছে এবং তা হস্তান্তরও করা হয়েছে। কাজ দ্রুত করা ও দুনীর্তি দূর করার লক্ষ্যে আমরা অতিদ্রুত সেনাবাহিনীর হাতে ক্যাম্পাসের কাজের হস্তান্তর চাই।’
শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহানও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবির সমন্বয়ক ছিলেন। তিন দাবিতে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের মেয়াদ ছয় বছর হয়ে গেলেও এখনো ভূমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি। সরকার পরিবর্তন হলেও এসব কাজে জড়িত যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।
‘নতুন উপাচার্য আসার পরেও দ্রুত কাজ শুরুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখিনি। আমরা মনে করি, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে গেলে দ্রুতই তা সম্পন্ন হবে।’
সেনাবাহিনীর কাছে প্রকল্প হস্তান্তরের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঢাকার মধ্যে হওয়ায় এলাকা থেকে এসে এখানে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ভর্তির পর নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আমাদের স্বপ্নের জায়গা। আর ঘোষিত আন্দোলনে কাল থেকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে; সেনাবাহিনীর হাতে দ্রুত ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর করে হলগুলো নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে, সেটাই আমরা চাই।’
রোববারই দুপুরে উপাচার্যের সভা কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সমাধানে গঠিত কমিটির সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় সভা হয়েছে। সেখানে নেতারা জবির দ্বিতীয় ক্যম্পাসের কাজ দ্রত সময়ের মধ্যে শেষ করা, আবাসন সংকটের সমাধান, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান বৃদ্ধি, স্বৈরাচারীর দোসরদের শাস্তির দাবি, জুলাই বিল্পবে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা জন্য অর্থ সংগ্রহ, ই-লাইব্রেরির আধুনিকায়ন, আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের জন্য সম্মাননা স্মারক প্রদান, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সব নিয়োগে জবি শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া, শিক্ষক মূল্যায়নের জন্য রেটিং ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর হাতে ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ তুলে দেওয়া, টিএসসি সংস্কারসহ জকসু নির্বাচন আয়োজন, ক্যান্টিনে ভর্তুকির ব্যবস্থা করারসহ বিভিন্ন দাবি রেখেছেন।
২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর সাত বছর পার হলেও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
এ জন্য দ্রুত দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সব কাজ সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনীর কাছে কাজ হস্তান্তরের দাবি এসেছে, যা রোববার দিনভর জবি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে শোনা গেছে।