দুইটি হাসি ও তিনটি হাততালির ইমোজি- তাইজুল ইসলাম যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পোস্ট দিয়েছেন ততক্ষণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন ওয়ানডের স্কোয়াড ঘোষণা এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সবশেষ ওয়ানডে সংস্করণে খেলেছে গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে। ওই সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন তাইজুল ইসলাম। দলে ফিরেছেন নাসুম আহমেদ। ক্ষোভ প্রকাশ করেই কি তাইজুলের এই পোস্ট? খোঁজ করা হয়েছিল তাইজুলের কাছে। সাড়া মেলেনি।
ক্ষোভ যে কাজ করেছে তা বোঝা যায় নানা সমীকরণ মেলালে। সাকিব আল হাসান এই সিরিজে খেলবেন না তা আগেই জানা ছিল। একজন বাঁহাতি স্পিনার দল সাথে রাখবে তা অনুমিতই ছিল। তাইজুল, নাসুম, রাকিবুল ও তানভীর এই চারজনের কে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান ধরবেন তা নিয়ে ছিল জল্পনা।
গত বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে দুইটি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ। হোমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুই সিরিজের তিনটি করে ম্যাচ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজে তিন ম্যাচে বাংলাদেশ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছিলেন যুব বিশ্বকাপজয়ী স্পিনার রাকিবুল হাসান। সাকিব না থাকায় রাকিবুলের খেলার সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু ২২ বছর বয়সী স্পিনার খেলার সুযোগ পাননি কোনো ম্যাচেই।
ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে তাইজুলকে ফেরানো হয়। প্রায় এক বছর পর ওয়ানডেতে ফিরে টানা দুই ম্যাচ খেলেন। পারফরম্যান্স আহামরি কিছুই ছিল না। প্রথম ম্যাচে ৫৪ রানের খরচে ছিলেন উইকেটশূন্য। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৩ রানে ১ উইকেট। সেটাও শ্রীলঙ্কার জয়ের থেকে ২ রান আগে থাকতে দলের অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে তার আর সুযোগ হয়নি।
লম্বা সময় পর বাংলাদেশ যখন আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ খেলার অপেক্ষায় তখন তাইজুলকে বিবেচনায় আনেননি নির্বাচকরা। তাকে টপকে সুযোগ পেয়েছেন নাসুম আহমেদ। যিনি বিশ্বকাপের পর ছিলেন উপেক্ষিত। কেন উপেক্ষিত? উত্তরটা প্রায় সবারই জানা। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অপছন্দের তালিকায় ছিলেন। বিশ্বকাপ চলার সময় বাঁহাতি স্পিনার নাসুমকে আঘাত করেন হাথুরুসিংহে। দলের সেই সময়ের ট্রেনার নিক লি ও দুই-তিন ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
হাথুরুসিংহে বিদায় নেওয়ার পরের ওয়ানডে সিরিজেই নাসুমকে আবার ফেরানো হলো। বার্তা পরিস্কার, নাসুমকে সুযোগ দিয়ে দেখতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। খুশি হয়ে ফেসবুকে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পোস্টও করেছেন দলে ফেরা নাসুম। তানভীর ইসলাম এখনো চোট থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেনি। আর যেই রাকিবুলকে নিউ জিল্যান্ড সফরে নিয়ে গিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উপযুক্ত মনে করছে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাকে আরো সময় দেওয়ার পক্ষে নির্বাচকরা।
কেন তাইজুল নেই সেই ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি নির্বাচক কমিটির প্রধান গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর থেকে। তবে নাসুমের উপর তার চোখ ছিল তা বোঝা গেল এই কথায়, ‘নাসুম সর্বশেষ বিশ্বকাপে ছিল। মাঝখানে খুব বেশি ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। সাকিব থাকলে হয়তো ভিন্ন হতে পারতো। আপাতত নাসুমই আমাদের মূল বাঁহাতি স্পিনার। নাসুম কঠোর পরিশ্রম করছে। কম্বিনেশনের জন্য তাকে রাখা।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে তাইজুলকে রাখা হয়েছিল নাসুমকে কেবল নেওয়া যাবে না কিংবা খেলাতে পারবে না হাথুরুসিংহের এমন কড়াকড়ির কারণে। সুযোগ পেয়েও পারফরম্যান্স করতে না পারায় তাইজুল জায়গা হারিয়েছেন। দরজা খোলা থাকায় নাসুম সেই সুযোগটি লুফে নেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শারজাহতে তার সুযোগ মিলতে পারে। এবার তিনি থিতু হতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।