ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত ব্রোকার হাউজ মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে তিন ব্যক্তির লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম তদন্তে বিএসইসি গঠিত কমিটির কাজে বাধা দেওয়া ও অসহযোগিতার অভিযোগে এ ব্যবস্থা নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, গত ৪ জুলাই থেকে কমিশনের অধীনে গঠিত তদন্ত কমিটি মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড ও কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করছে। গত বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (স্টক ব্রোকার) অফিস প্রাঙ্গণে স্পট ভিজিট করা হয়েছে। তবে, স্টক ব্রোকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্তে সহায়তা বা সুবিধা দিতে অস্বীকার করেছেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা অনুরোধ করলেও কোনো নথি উপস্থাপন বা অফিস প্রাঙ্গণে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২১ এর উপ-ধারা (৩) এবং ধারা ১৭ক (৩) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি স্টক ব্রোকারের কোনো ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার, রেকর্ডের প্রাসঙ্গিক বই এবং তথ্য ও বিভিন্ন নথির প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি। তদন্ত কমিটি উল্লিখিত স্টক ব্রোকারের অ্যাকাউন্টহোল্ডারদের (বিও আইডি-ধারক) সম্পদ এবং সিকিউরিটিজ ও স্টক ব্রোকারের ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্টের (ডিপি) নিয়ন্ত্রণে সংরক্ষিত সিকিউরিটিজগুলোর সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড, হাসান তাহের ইমাম এবং চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবৈধ/সন্দেহজনক লেনদেন সম্পর্কে তদন্ত কমিটি অস্পষ্ট রয়েছে। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২০এ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে, ডিপজিটরি আইন, ১৯৯৯ এর ধারা ১৪সহ, কমিশন ডিপোজিটরি এবং স্টক এক্সচেঞ্জকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগকারীর স্বার্থের সুরক্ষা ও মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের অধীনে সিকিউরিটিজগুলোর হেফাজত করতে বিশেষ সুবিধা স্থগিত করছে।
এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুরক্ষা করতে স্টক এক্সচেঞ্জকে ব্রোকারেজ হাউজটি বিষয়ে ৮টি নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—ফ্রি লিমিট সুবিধা, স্টক এক্সচেঞ্জে মালিকানা হিসেবে লভ্যাংশ দেওয়া, আইপিও ও কিউআইওতে কোটা সুবিধা, রেজিস্ট্রেশন সনদ নবায়ন, নতুন শাখা ও ডিজিটাল বুধ খোলার সুবিধা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া মো. জালাল ইকরামুল কবির, হাসান তাহের ইমাম, চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের যে কোনো ধরনের সিকিউরিটিজ লেনদেন বা হস্তান্তর যে কোনো ধরনের বিও আইডিতে (মূল ও লিঙ্ক হিসাব) স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। তাদের যে কোনো ধরনের অর্থ প্রদান বা হস্তান্তর স্থগিত থাকবে।
ব্রোকারেজ হাউজটিতে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে অর্থ ঘাটতি পূরণ ও গ্রাহকদের সিকিউরিটিজ ঘাটতি পূরণের পরে স্টক এক্সচেঞ্জকে ব্রোকারেজ হাউজটি নিয়ে কমপক্ষে ১ বছরের জন্য বিশেষ তদন্ত করতে বলা হয়েছে। প্রতি মাসে দুইবার গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাব যাচাই করে দেখবে।
বিএসইসি‘র আটটি নির্দেশনা পরিপালনে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তা নিয়ে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিএসইসিতে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।