বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে চার ব্যক্তি ছাড়া দলের অন্য কারো কথা শুনতেন না। এই চারজনই শেখ হাসিনাকে জনবিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের এক নেতার দাবি, ওই চারজনের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সালমান এফ রহমান, ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই গ্যাং শেখ হাসিনাকে পতনের দিকে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এই চারজনের গ্যাং তাকে পতনের দিকে নিয়ে গেছে। তিনি এই লোকেদের ওপর অন্ধ বিশ্বাস করেছিলেন এবং অতীতে তার যে রাজনৈতিক সত্ত্বা ছিল তা তিনি হারিয়ে ফেলেন।’
কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনে বিএনপিকে না আনা শেখ হাসিনার ‘বড় ভুল’ ছিল।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে লন্ডনে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচনের এক বছর আগে…পর্দার আড়ালে একটি প্রস্তাব ছিল যেখানে আমরা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তারেকের সাথে যোগাযোগের কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু হাসিনা প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দেননি।’
একজন আওয়ামী লীগ নেতার মতে, বিএনপি প্রধানের ছেলের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনার অস্বীকৃতি একটি ‘ভুল’। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার মাধ্যমে ক্ষোভ ও অভিযোগগুলো শান্ত হয়ে যেত।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি (চাঁদাবাজি), পুলিশের নৃশংসতার কারণে আমরা জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ অনুভব করতে পেরেছিলোম তা কেটে যেত, যদি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হতো। আমরা এখনও জয়ী হতে পারতাম এবং দলকে ক্ষমতায় রাখতে পারতাম।’
নেতাকর্মীরা মনে করেন, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে, অনেক বেশি একগুঁয়ে হয়ে উঠেছিলেন এবং কোনো পরামর্শ শুনতেন না।
দলটির এক নেতা বলেন, ‘তিনি টানা চতুর্থ জয়ের পর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং কোটা সংস্কারের প্রতিবাদ শুরু হলে জনগণের ক্ষোভের মাত্রা অনুভব করতে ব্যর্থ হন।’
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা করতে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছিলেন কয়েক জন নেতা, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়েছিল যখন গোয়েন্দা বিভাগ জুলাই মাসে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়েছিল এবং ভয় দেখিয়ে ও আন্দোলন প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।