গোপালগঞ্জের একটি ঘেরপাড়ে মাচা পদ্ধতিতে তরমুজ আবাদ করেছেন এক কৃষক
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ঘেরের আইলে অসময়ে তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা এই পদ্ধতিতে রসালো ফলটি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। ফলে সদর উপজেলার ঘেরপাড়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ বছরে আগে অসময়ের তরমুজ চাষ শুরু হয়। তখন মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে তরমুজের চাষ করেন কৃষক। প্রতি শতাংশে ১৮০ কেজি ফলন পাওয়া গিয়েছিল। এক শতাংশ জমিতে তারমুজ চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে দুই হাজার টাকা। তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২০০ টাকা দরে। খরচ বাদে তরমুজ চাষে কৃষক শতংশে ৫ হাজার ২০০ টাকা লাভ করেছেন। এরপর থেকেই প্রতি বছর ঘেরের আইলে তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের তরমুজ চাষি বিধান বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ৭০ শতাংশের ঘের রয়েছে। ঘেরের পাড় বা আইল রয়েছে ২০ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ঘেরপাড় আনাবাদি পড়ে থাকত। তখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং কৃষি উপকরণ সহযোগিতা পেয়ে ঘেরপাড়ে তরমুজের চাষ করি। এখনো চাষা অব্যাহত রয়েছে। এ বছরও ঘেরপাড়ে তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি হয়েছে। ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি। বিগত বছরগুলোতেও তরমুজ চাষ করে ভালো টাকাই উপার্জন করতে পেরেছি।’
একই গ্রামের কৃষক রাজিব বালা বলেন, ‘আমার প্রতিবেশী বিধান বিশ্বাস পাঁচ বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন। তার দেখাদেখি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পেয়ে আমিও ২৫ শতাংশ ঘেরপাড়ের অনাবাদি জমিতে তরমুজের চাষ করেছি। প্রতিবেশী নির্মলেন্দু বিশ্বাস সব ধরণের সহযোগিতা করেছেন। আমার ঘেরপাড়েও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি সাড়ে ৪ টন ফলন পাবো। তরমুজ বিক্রি করে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা পাবো। ৫০ হাজার টাকা খরচ বাদ দিলে তরমুজ থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারবো বলে আশা করছি।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, ‘কয়েক বছর আগে একজন কৃষক ঘেরপাড়ে অসময়ের তরমুজ চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অন্তত ৩০ জন কৃষক ব্লাক সুইট, বেঙ্গল টাইগার ও সোনিয়া জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। তাদের জমিতে তরমুজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে তরমুজের দাম ভালো রয়েছে। তাই তরমুজ বিক্রি করে কৃষক আর্থিকভাবে লাভের আশা করছেন।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ‘এ বছর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ একর জমিতে অসময়ের তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রতি একরে ১৮ মেট্রিক টন তরমুজ ফলনের আশা করা হচ্ছে। সেই হিসেবে ৫ একরে ৯০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হবে। প্রতি কেজি তরমুজ কৃষক খেত থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। সে হিসাবে এ তরমুজের বাজার দর ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অসময়ের তরমুজ খুবই রসালো। ভেতরের অংশ বেশ লাল হয়। বাজারে এই তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দিতে চাই। তাই কৃষকদের দিয়ে আমরা উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদ করাচ্ছি। এই ফসল বিক্রি করে কৃষক অধিক লাভবান হচ্ছেন, তেমনি দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, ‘আগে কৃষক ঘেরপাড়ে শুধু শাক-সবজির আবদ করতেন। প্রতি কেজি শাক সবজি গড়ে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পক্ষান্তরে তরমুজ চাষ করে কৃষক প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন।কৃষকদের নিয়ে আমরা উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করাচ্ছি। ফলে তারা লাভবান হচ্ছেন। কৃষিতে সমৃদ্ধি আসছে।’