কর্ণফুলী পেপার মিলস
কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কর্ণফুলী পেপার মিলসের (কেপিএম) উৎপাদন প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। একসময়ের বিখ্যাত এই কাগজকল আর্থিক সংকট, অর্থাভাবে কাঁচামাল কিনতে না পারা এবং জীর্ণ মেশিনারিজে অচলাবস্থার কারণে কারখানাটি উৎপাদনে ফিরতে পারছে না। ফলে, চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন কারখানার দুই শতাধিক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা।
কর্ণফুলী পেপার মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা উৎপাদন চালুর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারখানাটিতে শিগগির কাগজ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে বলেও তাদের আশা।
কর্ণফুলী পেপার মিল সূত্রে জানা যায়, গত আগস্ট মাসের শুরু থেকেই কর্ণফুলী পেপার মিলের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এক সময় এই কারখানায় দৈনিক প্রায় ১০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত কাগজ উৎপাদন হতো। ২০১৭ সাল থেকে উৎপাদন মাত্র ১০ থেকে ২০ মেট্রিক টনে নেমে আসে। সর্বশেষ জুলাই মাসে কারখানাটির দৈনিক উৎপাদন ছিলো মাত্র ৫ মেট্রিক টন। আগস্টের শুরু থেকে কাগজ উৎপাদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অধিনস্থ কারখানাটি মূলত আর্থিক সঙ্কট, অর্থভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পারা, স্থানীয়ভাকে কাঁচামালের যোগান না থাকা, জরাজীর্ণ মেশিনারিজ এবং সর্বোপরি অনিয়ম অবস্থাপনার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে বলেও জানায় সূত্রটি।
কেপিএম শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ (সিবিএ) সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২০১৭ সালে তৎকালীন এমডি ড. এম এ কাদের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করে এই পেপার মিলটি বন্ধের পাঁয়তারা করেন। তিনি মিলসটি পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য স্থানীয় কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে পাল্প উৎপাদন প্ল্যান্টটি বন্ধ করে দেন। নিজস্ব কাঁচামাল দিয়ে কাগজ তৈরির প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয় সেসময়। ২০১৭ সালের পর থেকে বিদেশ থেকে আমদানি করা পাল্প এনে নামেমাত্র কারখানা চালু রাখা হচ্ছে। দৈনিক ৭০-৮০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকালেও মেশিনারিজ অচল করে দিয়ে কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ৫ থেকে ১০ মেট্রিক টনে নামিয়ে আনা হয়েছে অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। বর্তমানে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। ফলে চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা মধ্যে আছেন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরা। মিলটি চালু না হলে তারা বেকার হয়ে পড়বেন।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী পেপার মিলের জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত কাগজ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল পাল্প সংকট ও কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রায় দেড় মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কারখানায়। আমরা উৎপাদন চালুর জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এই কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, সহসা এই কারখানায় কাগজ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে।