ঢাকার সাভারে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাউসার হোসেন খাঁন (২৭) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও চারজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের টোঙ্গাবাড়ী এলাকায় মন্ডল গ্রুপের সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিক কাউসার হোসেন খাঁন টোঙ্গাবাড়ি এলাকার ম্যাংগো টেক্স কারখানার সেলাই মেশিন অপারেটর ছিলেন। তার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মধ্য রতনপুর।
গুলিবিদ্ধ অন্যরা হলেন, আশুলিয়ার ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান, শ্রমিক রাসেল ও নয়ন।
শিল্পপুলিশ জানায়, আশুলিয়ার টোঙ্গাবাড়ী এলাকায় মন্ডল নিটওয়্যার লি.-এর শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় কারখানার বাইরে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। নাশকতা ও ভাঙচুর ঠেকাতে পার্শ্ববর্তী ম্যাংগো টেক্স গার্মেন্টস ও ন্যাচারাল ডেনিম গার্মেন্টস ছুটি দেয় মালিকপক্ষ। এ সময় আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হন।
ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক মো. সুমন বলেন, ‘সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিল। কারখানায় কোনো ধরনের আন্দোলন হয়নি। তবে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানাতে মন্ডলের সামনে যায়। সেখানে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেয়। এ সময় শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গুলি দুই জনের পায়ে লাগে। পরে আমি তাদের পিএমকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
আশুলিয়ার পিএমকে হাসপাতালের অ্যডমিন ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন বলেন, নাজমুল ও হাবিব নামে দুই শ্রমিককে আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুইজন শ্রমিককে আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শ্রমিক কাউসার, নয়ন ও রাসেলকে সাভারের এনাম মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসকরা কাউসারকে মৃত ঘোষণা করেন। এ প্রসঙ্গে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তার তলপেটে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া নয়ন এবং রাসেলের বুকে গুলি লেগেছে। আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের একজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে।’
ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এইচআর) সবুজ হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কারখানায় কোনো সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে, পাশের মন্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক মারা গেছে। এ কথা শুনে সব শ্রমিক একসঙ্গে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যায়। পরে ওখানে কি ঘটেছে আমার জানা নেই।’
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি, আমরা হাসপাতালে এসেছি।’
মোট কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে রয়েছি, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।’
তবে এ বিষয়ে জানতে শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে সকালে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তৈরি পোশাক কারখানা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। তাদের বিক্ষোভের বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।