রাসেল মৃধা
জন্ম থেকেই দুই হাত এবং একটি পা নেই রাসেল মৃধার। বাঁ পা থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোটো। স্বপ্ন দেখেন পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করবেন, বাবা-মাসহ পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেবেন। তাই কোনো বাধা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বাঁ পা দিয়ে লিখে এবার আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৩.২৯ পেয়েছেন অদম্য রাসেল মৃধা।
সিংড়ার শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে ২০২৪ সালে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
রাসেল মৃধা নাটোরের সিংড়া উপজেলার শোলাকুড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার ছেলে। ছেলের পাস করার খবর পেয়ে বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সবাই আনন্দিত।
রাসেল মৃধার বাবা আব্দুর রহিম মৃধা বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েও থেমে যায়নি। দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় পাস করেছে। সেজন্য আমিসহ আমার পরিবারের সবাই অনেক আনন্দিত। অভাব-অনটনের মধ্যেও আমার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ করেনি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলে তার মনোবল ও ইচ্ছা শক্তিতে আজ আলিম পাস করেছে। আমার ছেলের এ সফলতার পিছনে শিক্ষকদের অনেক শ্রম রয়েছে। শিক্ষকদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আমার ইচ্ছা সে এভাবে এমএ পাস করে উচ্চ শিক্ষা শেষে তার যোগ্যতায় সে চাকরি করবে। সে জন্য আমার যত কষ্টই হোক আমি ছেলের জন্য তা করব।’
শিক্ষার্থী রাসেল মৃধা বলেন, ‘আলিম পরীক্ষায় পাস করেছি এজন্য অনেক ভালো লাগছে। আমার বাবা দিনমজুরের কাজ করে আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। আমি আমার বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী মানুষ একটা সরকারি চাকরি যেন দেন। আমি চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে চাই। আমার পরিবারের দায়িত্ব নিতে চাই।’
শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোতাররফ হোসেন বলেন, ‘রাসেল মৃধার দুই হাত নেই, একটি পা আছে সেটাও স্বাভাবিক নয়। আঙুল দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়। রাসেল নানা প্রতিকূলতার মাঝেও পড়াশোনা করে যাচ্ছে। সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে। তার ইচ্ছা শক্তির কারণে আজ সে এতদূর এসেছে। তার জন্য দোয়া করি, সে পড়াশোনা শেষ করে জীবনে উন্নতি করুক। তার সাফল্য কামনা করছি।’
২০২২ সালে রাসেল মৃধা শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে জিপিএ ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।