মেঘের বাড়িখ্যাত সাজেকের পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষগুলো ভালো নেই। পাহাড়ে কোনো পর্যটক যেতে না পারায় নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের। প্রধান আয়ের উৎসটি থমকে যাওয়ায় জীবনযাপন হয়ে উঠছে মহা কষ্টের।
১৯ সেপ্টেম্বর থেকে সাজেকসহ সংশ্লিষ্ট রিসোর্টগুলোতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে পর্যটকদের ভ্রমণ। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তারও নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পাহাড়ের স্থানীয় অনেক পরিবারের জীবনজীবিকা চলে পর্যটকদের নানা সেবার মাধ্যমে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাও ভালো নেই।
বন্ধ রয়েছে সাজেকের প্রত্যেকটি কটেজ-রিসোর্ট ও হোটেল রেষ্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সকল ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে করে কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে ব্যবসার সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদেরও দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। কারণ, প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস বন্ধ হলে তার প্রথম ধাক্কা জড়িত কর্মচারীদেরই সবার আগে সইতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা চিন্তায় পড়েছেন কিভাবে তারা ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিবেন।
এদিকে সাজেকের বিভিন্ন উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ব্যবসা বন্ধ থাকায় সে ঋণও পরিশোধ করতে পারছেন না। আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে তারা সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি সাজেক সড়কের মাহিন্দ্রা গাড়িচালক মো. জসিম উদ্দিন জানান, প্রতিমাসে সাজেকের ভাড়া থেকে তার আয় কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা। পর্যটক না থাকায় ভালো নেই তিনি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ২ লক্ষ টাকা এখন আয় না থাকাতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না।
জসিম উদ্দিন বলেন, সাজেকে নিয়মিত প্রায় ২শ গাড়ি পর্যটক নিয়ে যাতায়াত করে। প্রতি শুক্র ও শনিবারে কমপক্ষে ১শ গাড়ি চলাচল করে। সাজেক সড়কেরই মাহিন্দ্রা গাড়ি রয়েছে ৪০টি। পর্যটন বন্ধ থাকায় আমরা পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছি।
সাজেকের পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্টের মালিক মো. রিয়াদ বলেন, সাজেক পর্যটন খোলা থাকলে দৈনিক আমাদের ৩০-৪০ হাজার টাকা ব্যবসা হয়। এখন এখানকার প্রায় ১৮টি রেস্টুরেন্টের সবগুলোই বন্ধ। রেষ্টুরেন্টের কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
কুঁড়েঘর রিসোর্টের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিমাসে ছোট ছোট রিসোর্টগুলোতে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা আয় হয়।এখন আয় বন্ধ থাকলেও খরচ বন্ধ নাই।
সাজেকে ১১৬ টি রিসোর্ট, ১৪টি রেস্টুরেন্ট, ১শটির মতো ছোট বড় বিভিন্ন দোকান রয়েছে। বর্তমানে এসব জড়িত প্রত্যেকটা মানুষ খুবই কষ্টে আছে। খাগড়াছড়ির রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সাজেক পর্যন্ত প্রায় ৩০ ভাগ লোক এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িত। এখানে সবজি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে জিপ-মাহিন্দ্র গাড়িচালক, মুরগী ব্যবসায়ীসহ ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।
সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সূপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, ৩১ অক্টোবরের পর যদি সাজেক পর্যটন খুলে দেওয়া না হয়- এমনিতে বর্তমানে সবার মাথায় হাত, জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে।
তিনি বলেন, এখানে সমস্যা হলো তিন পার্বত্য জেলায় একসাথে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য একসাথে যাতে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটক ভ্রমণের কার্যক্রম শুরু করা যায় তা নিয়ে আমরা ৩ জেলা প্রশাসক একসাথে আলোচনা করেছি। আমরাও চাই কারো জীবন জীবিকা যেন স্থবির না হয়ে পড়ে। কেউ যেনে কষ্টে না পড়েন।