পূর্ব মেদিনীপুরে দানার প্রভাব, প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হয়। ছবি: পিটিআই
ভারতের ওড়িশায় তাণ্ডব চালানোর পর দেশটির ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানা। এদিকে পটুয়াখালীতেও দানার প্রভাব পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। আহত হয়েছে ৪ জন।
ওড়িশায় দানার তাণ্ডব
ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ধামারা ও ভিতরকণিকার মধ্যবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় দানা। পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টা থেকে ধামারায় দানার স্থলভাগের আছড়ে পড়া বা ল্যান্ডফলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যত সময় যায়, ততই ধামারায় দানার শক্তি বাড়তে থাকে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শেষ হয়।
বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হচ্ছে। বিমান ওঠা-নামা শুরু হয়ে যাবে। কলকাতায় বিমান চলাচল সকাল ৮টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে।
ওড়িশার ভদ্রকে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।
মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝড়
পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়নি। কলকাতার আকাশে কালো মেঘ। প্রচুর গাছ পড়ে গেছে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর দানা পশ্চিমদিকে চলে যায়। তবে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি।
ভারতের ওড়িশা রাজ্যে দানার আঘাত
ডয়চে ভেলে জানায়, পশ্চিমবঙ্গে ঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। ডয়চে ভেলের ফটোসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দিঘায় বৃষ্টি শুরু হয়। সারাদিন ও সারারাত ধরে বৃষ্টি হয়। যত রাত বেড়েছে ততই ঝড়-বৃষ্টির দাপট বেড়েছে। শুক্রবার ভোরে ঝড়ের দাপট বেড়ে যায় এবং সমুদ্র উত্তাল হয়। দিঘার মেরিন ড্রাইভ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দানার আঘাত দিঘা ও সাগরদ্বীপে
ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়ার পর দিঘা ও সাগরদ্বীপে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দানা ওডিশার ধামরা ও তৎসংলগ্ন ভেতর কণিকা টানর ছোট্ট দ্বীপ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এলাকায় আছড়ে পড়ে। তখন ঘূর্ণিঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।
মন্দারমণি ছাড়াও বকখালী, তাজপুর, রায়দিঘি, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথর প্রতিমা, হলদিয়া ও সাগরদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে ওডিশার পারাদ্বীপের পর পশ্চিমবঙ্গের দিঘাসহ তার আশপাশের এলাকায়।
হয়নি কোনো প্রাণাহানি
ভারতে দানায় কারও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। কিছু গাছপালা ভেঙে গেছে। যদিও নিরাপত্তার কারণে দিঘায় বারবার বন্ধ করতে হয়েছে বিদ্যুতের সরবরাহ। দিঘার সমুদ্রসৈকতের গার্ডওয়াল ছাপিয়ে সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাস্তার ওপর। তবে আগেই রাজ্য প্রশাসন দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর ও তাজপুর থেকে পর্যটকদের সরিয়ে দেয়।
ওডিশার জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস
রাজ্যের অন্যত্র বিশেষ করে সাগরদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। কিন্তু সেই জলোচ্ছ্বাস ফসলের খেত ও ছোটখাটো কাঁচা বাড়িঘর ভাসিয়ে নিলেও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
পটুয়াখালীতে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, আহত ৪
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব পটুয়াখালীতেও পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। আহত হয়েছে ৪ জন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের ৭টি বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের ১০টি বসতঘর ও রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়ায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় ৪ জন আহত হয়। এদের মধ্যে মির্জাগঞ্জের দেউলী গ্রামের রুনা বেগম নামের এক নারীর পা ও কলাপাড়ার তাহেরপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম নামের এক নারীর হাত ভেঙে যায়।
এছাড়া উপড়ে পড়েছে অনেক গাছপালা। এদিকে কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়তলা গ্রামের বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাহেরপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি ছেলের ঘরে ছিলাম। হঠাৎ কালো মেঘে এসে ঝড় শুরু হয়। আমাদের ঘরের উপরে গাছ পড়ে। গাছের আঘাতে আমার হাত ভেঙে যায়।’
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
পটুয়াখালীর মনোয়ারা বেগমের হাত ভেঙে যায় দানার আঘাতে।
দানার প্রভাব কেটেছে খুলনায়
খুলনা শহর এবং এর আশপাশের উপজেলায় শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে মেঘ দেখা গেলেও আবহাওয়া স্বাভাবিক।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ গণমাধ্যকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করছে। খুলনা অঞ্চলে দানার প্রভাব অনেকটা কেটেছে। তবে দুপুরে দানার প্রভাবের শেষ ধাক্কা হিসেবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।
যেমন থাকবে শুক্রবারের আবহাওয়া
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে শুক্রবার দেশের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়।